কোচির এক ছেলের ভারতের ‘দ্য ওয়াল’ হয়ে ওঠার গল্প
নিউজ ডেস্ক: এই কোচি নিবাসী বছর ৩৫-এর যুবকের জন্যই প্রায় চার দশক বাদে এসেছে হকি থেকে অলিম্পিকের পদক এসেছে ঘরে। হকিতে ভারতের এই ঐতিহাসিক জয় নিশ্চিৎ করার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
২০২১ এ এই নজির গড়ার আগে সেই, ১৯৮০ সালে শেষবার মস্কো অলিম্পিক্সে সেমিফাইনালে উঠেছিল ভারত। তুখোড় পারফরম্যান্সকে হাতিয়ার বানিয়ে এইবার টোকিওতে শেষ চারে ওঠে ইন্ডিয়া। স্বর্ণ পদক জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন দেশবাসী।
বেলজিয়ামের কাছে পরাজিত হয়ে সোনা-রুপো জেতার আশা শেষ হয়ে যায় মনপ্রীতদের। কিন্তু ব্রোঞ্জের আশা জিইয়ে রেখেছিল ‘মেন ইন ব্লু’। আর শেষ পর্যন্ত কোটি কোটি ভারতবাসীর স্বপ্ন পূরণ করে জার্মানিকে হারিয়ে ভারতীয় হকি টিম জিতে নেয় ব্রোঞ্জ পদকটি।
এই মনপ্রীত স্কোয়াডের ‘দ্য ওয়াল’ ছিলেন ভারতের গোলকিপার পিআর শ্রীজেশ। প্রতিপক্ষের অসংখ্য গোল আটকে, ভারতকে জয়ের আরো কাছাকাছি নিয়ে গেছেন তিনি।
বছর পঁয়ত্রিশের এই গোলকিপারের দুর্দান্ত সেভের ওপর ভরসা করেই ভারত এইবার ইতিহাস গড়ে টকিয়োতে। পিআর শ্রীজেশ আর তাঁর বিশ্বস্ত হকি স্টিক রুখে দিয়েছে প্রতিপক্ষের অসংখ্য আক্রমণ।
তবে, কথায় আছে ‘ কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলেনা,’ ভারতীয় হকি দলের ‘ দ্য ওয়ালের ‘ জীবন যুদ্ধটাও ঠিক ততটাই কঠিন ছিল।
কোচির বাসিন্দা শ্রীজেশের বাবা পিভি রবীন্দ্রন সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া একটি সাক্ষাত্কারে জানান, “আমি বা আমারা পরিবার নয়, গোটা পাড়াই শ্রীজেশের জন্য গর্বিত। গ্রামে থাকার জন্য আমাদের হকির সঙ্গে সেভাবে আমাদের আয়ত্তের মধ্যে ছিল না। তবে শ্রীজেশ তিরুঅনন্তপুরমের জিভি রাজা স্পোর্টস স্কুলে ভর্তি হওয়ার পরেই ওর জীবনে হকি ঢুকে গেল। তখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।”
শ্রীজেশ এবং তাঁর পরিবারের সংগ্রামের কথা তুলে ধরে শ্রীজেশের বাবা বলেন, “আমি একজন সাধারণ কৃষক ছিলাম। সেভাবে উপার্জন করতাম না। শ্রীজেশ যখন ছোট ছিল তখন একটা গোলকিপিং কিটের দাম পড়ত ১০ হাজার টাকা। যা আমাদের কেনার সামর্থ ছিল না। কিন্তু যেভাবে হোক নিজেদের গোরু বিক্রি করে শ্রীজেশের জন্য গোলকিপিং কিট কিনতে পারি।”
২০১৬ সালে রিও অলিম্পিকে হেরে যাওয়ার পর খেলা ছেড়ে দেবেন বলে ভেবেছিলেন শ্রীজেশ। তবে ভরসা জুগিয়েছিলেন স্ত্রী। আর তারপরেই আবারও ঘুরে দাঁড়ান তিনি। প্রস্তুতি নেন টকিয়ো জয়ের জন্য।
জীবনে যেই জিনিসটা খুব সহজে হাসিল হয়ে যায়, মানুষ তাঁর মর্ম উপলব্ধি করতে পারেনা। কিন্তু যেই সাফল্য কঠিন অধ্যবসায় ও প্রতিকূল সমস্ত পরিস্থিতির বিরুদ্ধে লড়াই করার পর আসে, সেই জিতের আমেজটাই আলাদা হয়। তাই না?