৩৫০ বছরের ঘটকবাড়ির দুর্গা পুজো এখনো পালন হয় প্রাচীন নিয়ম মেনে!
শহরের দক্ষিণে যাদবপুরের রামগড়ে ঘটকবাড়িতে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই। সে হিসেবে রামগড়ের ঘটকবাড়ির পুজোএপার বাংলা এবার ৭৫ বছর পেরিয়ে ৭৬-এ পড়লেও তাঁদের সাবেক বাসগৃহ পূর্ববঙ্গ তথা অধুনা বাংলাদেশের বিঝারি গ্রামে দুর্গাপুজো শুরু হয় প্রায় ৩৫০ বছর আগে। পরিবারের এক কর্তা প্রসেনজিৎ ঘটক জানাচ্ছেন,৩৫০ বছরে এবাড়ির পুজোয় ছেদ ঘটেনি কখনও।
আরো পড়ুন-দুষ্কৃতী হামলায় খুন দত্তপুকুরের ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধানের মা
বাংলাদেশের বিঝারিতে পুরোহিত পরিবার হিসেবে সুপরিচয় ছিল ঘটকদের। এঁরা পরবর্তীতে ঘটক উপাধি লাভ করেছিলেন। এই পরিবারের এক পূর্বপুরুষ বিধুভূষণ ঘটক মা সারদার প্রত্যক্ষ শিষ্য ছিলেন বলে জানা যায়। উদ্বোধন প্রকাশিত গ্রন্থে মা সারদার প্রত্যক্ষ শিষ্যদের তালিকাতেও এঁর নাম রয়েছে। বিধুভূষণ স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন এমনও জানা যায়। ১৯৪২-এর ভারত ছাড়ো আন্দোলনেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি। ১৯৪৭-এ দেশ ভাগের প্রেক্ষাপটে ঘটক এপার বাংলা চলে আসেন। সেই থেকে পুজো চলছে এখানেই। এখন পরিবারের অনেকেই কর্মসূত্রে ছড়িয়ে পড়েছেন দেশের অন্য শহরে। কেউবা বিদেশেও থাকেন। কিন্তু পুজোর কটা দিন সকলেই পুজোবাড়িতে আনন্দময়ীর উৎসবে ঠিক হাজির হবেনই। অতিথি অভ্যাগতদের ভিড়ে পুজোর কদিন গমগম করে এ বাড়ি। এঁদের পুজোর বিশেষত্ব এখনো তিন শতাব্দীর প্রাচীন নিয়ম মেনে পুজোর তিন দিনই বলি হয় মহামায়ার সামনে। এবং নিজের হাতে সেই বলিদান দেন পরিবারেরই কোনো সদস্য। প্রতিদিন দুবেলা দুই থেকে আড়াইশ জনের ভোগ রান্না হয় পুজোবাড়িতে। পুজোর আরেক বিশেষত্ব মা দুর্গাকে উৎসর্গ করা হয় আমিষ ভোগ। তিন দিনই মায়ের মাছের পদ অপরিহার্য। পুজোয় অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো মা দুর্গার বামে থাকেন গণেশ। আর কার্তিকের অবস্থান কলা বউয়ের পাশে মায়ের ডান দিকে। এমনই নানা অভিনবত্বে বিশিষ্টতা অর্জন করেছে ঘটক বাড়ির পুজো। প্রসেনজিৎ জানান, ‘পরিবারের 350 বছরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এক কালে এই পুজো শুরু করেছিলেন আমাদের বর্তমান প্রজন্মের প্রপিতামহের প্রপিতামহ।’ সে সময়কার তালপাতার পুঁথি ও ভুর্জ পত্র এবং তাল পাতাতেই লেখা চন্ডী আজো যত্নে রক্ষিত হয়ে আছে বাড়িতে।
আরো পড়ুন-‘রাজভবনে কবি বসে আছেন..এই কবি রাজার’:ফের রাজ্যপালকে আক্রমণে ব্রাত্য
পুজোর কূল পুরোহিত বংশানুক্রমিকভাবে মেদিনীপুরের নিকুশিনীর ভট্টাচার্য পরিবার থেকেই আসছেন। পুজোর ক’দিন বাড়ির যাবতীয় ভোগ রান্না করে আসছেন পরিবারের মহিলারাই। প্রতিবছর একই শিল্পী পরিবারের সদস্যরা গড়ে আসছেন একচালা প্রতিমা। তন্ত্র মতে শাক্ত আরাধনায় ঘটক বাড়ির পুজোর ঐতিহ্য আজও বজায় রাখার নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। কলকাতার পারিবারিক পুজোর ঐতিহ্যে ঘটক পরিবারের পুজো উল্লেখযোগ্য স্থান করে নিয়েছে।