বিরিয়ানির হাড়িতে কেন রেড কার্পেট

নিউজ ডেস্ক: বিরিয়ানি শব্দের উৎপত্তি একটি ফারসি শব্দ বিরিয়ান থেকে। ফারসিতে বিরিয়ান শব্দের অর্থ রান্নার আগে ভেজে নেওয়া। বাস্তবেও বিরিয়ানি রান্নার আগে সুগন্ধি চাল ঘি দিয়ে ভেজে নেওয়া হয়। তাই এই নামকরণ করা হয়েছে বলেই বিশেষজ্ঞের মতামত। জেনে রাখা ভাল আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে বৃহত্তর ময়মনসিং অঞ্চলে যে “বিরন করা” শব্দটি ব্যবহৃত হয় সেটা এই ফারসি শব্দেরই পরিবর্তিতরূপ বলে জানা যাচ্ছে ।

ভারতীয় উপমহাদেশে বিচিত্র রকমের বিরিয়ানির দেখা পাওয়া যায়, এদের মধ্যে ঢাকাই, সিন্ধী, লাখনৌয়ি, হায়দারাবাদী, কলকাতাই, বোম্বাই,মালাবারী, থালেশ্বরী ও দিল্লীর বিরিয়ানি বেশ প্রসিদ্ধ ও জনপ্রিয় বলা চলে।

ছোট দোকান হোক বা বড় রেস্তোরা,একটা লক্ষ্যণীয় বিষয় হল বিরিয়ানির হাড়ি জড়ানো থাকে লাল কাপড়ে। ঠিক কি কারণে এই ব্যবস্থা? জানেন কি? শুনুন তবে, ভারতবর্ষের ইতিহাসে মুঘল সম্রাজ্ঞী মুমতাজ মহল শুধু যে শাহ জাহানের তৈরী তাজমহলের কারণে অমর হয়ে আছেন এমন কিন্তু একেবারেই নয়। তাজমহল ছাড়াও ভারতবর্ষের মানুষ তাঁরই সুবাদে পেয়ে গিয়েছে এক অভাবনীয় জিনিস। সেই জিনিসটি হল আমাদের সকলের প্রিয় বিরিয়ানি।

কথিত আছে একবার মুমতাজ মহল মুঘল সৈন্যদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে ব্যারাকে গিয়েছিলেন। কিন্তু সম্রাজ্ঞী দেখলেন সৈন্যদের স্বাস্থ্য মোটেই ভাল নয়। তাদের এই দুর্দশা দেখে মিলেটারি মেসের বাবুর্চিকে তিনি নির্দেশ দিলেন চাল ও গোশত সমৃদ্ধ এমন একটা পুষ্টিকর খাবার তৈরি করতে যা খেলে সৈনিকদের এই অপুষ্টি সহজেই নিরাময় হবে। মুমতাজ মহলের আদেশে বাবুর্চি যে খাবারটি তৈরি করলেন সেটাই আজকের দিনের বিরিয়ানি নামে সর্বজনাদৃত। পরে ভোজন রসিক মুঘলদের খাবার টেবিলে খুব সহজেই জয়গা করে নীল এই সুস্বাদু বিরিয়ানির।

পূর্বে ঢাকা থেকে পশ্চিমে পেশোয়ার অবধি বিরিয়ানির এত রকমফের আমাদের খাদ্যতালিকায় এনে দিয়েছে বৈচিত্র। তবে এই লাল কাপড়ের রহস্য উদ্ঘাটন মোঘল সাম্রাজ্যের মতোই জমকালো বলা যায়।

লাল রং উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানোর জন্য আমরা ব্যবহার করি, যেটাকে আমরা বলে থাকি রেড কার্পেট। মুঘল সাম্রাজ্যের সেরা খানা যখন পারস্য মুলুকে পারি দিল হুমায়ূনের সময় তখন তাঁকে ‘রেড কার্পেট’ অভ্যর্থনা জানানো হয়েছিল এবং সেই সঙ্গে তার রসুইখানার সেরা খাবার বিরিয়ানি উপস্থিত ছিল। তাকেও লাল শালুতে জড়িয়ে দেওয়া হয়। সেই রেওয়াজ মোঘল আমল ছাড়িয়ে এখনো বহাল তবিয়তে চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *