সুন্দর হাতের লেখার দিন ফুরিয়েছে,কম্পিউটারের চাবি কাড়ছে কলম

ইন্দ্রজিৎ রায়, সম্পাদক – হাতের লেখা একসময় প্রশংসার জিনিস ছিল। কারও কারও লেখা ছিল মুক্তোর মতো। যেন মুদ্রিত হরফ। আবার অনেকের হাতের লেখা দুর্বোধ্য হওয়ায় পাঠোদ্ধার করা ছিল মুশকিলের। অনেক অভিভাবকই শিশুকিশোরদের হাতের লেখা যাতে সুন্দর হয়, সেদিকে নজর দিতেন।

হাতের লেখা ছিল সারা জীবনের এক সম্পদ। কিন্তু কম্পিউটার প্রবেশ করার পর হাতের লেখার পাট পাট গুটোতে চলেছে। এখন কম্পিউটারের চাবি টিপে লেখা হয়। চাকরির অ্যাপ্লিকেশন থেকে শুরু করে ব্যাংকের কাজ সহ প্রায় সব কাজেই কাগজের ব্যবহার কমেছে। এখন প্রিন্ট আউট হলেই কাজ হয়ে যায়।স্কুলকলেজে হাতের লেখা ভালো হলে তার দাম দিতেন স্যারেরা। হাতের লেখা ভালো হলে অনেক সময় নম্বর পেতে সুবিধা হত।

একটা সময় ছিল সে কম্পিউটার আসার আগে, যখন প্রতিটি বাড়িতে ছোটদের হাতের লেখার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হত। জন্মের পর জ্ঞান হলে হাতেখড়ি হত। সে হত খাগের কলমে। এ উপলক্ষে মঙ্গলিক অনুষ্ঠান হত। পরিজনরা নিমন্ত্রিত হতেন।মানুষ হাত দিয়েই দেবতাকে পুজো করেন। মা দুর্গার দশ হাত, শ্রী কৃষ্ণের চার হাত। আবার এমন দেবদেবী আছেন যাদের কোনও হাতই নেই। যেমন, জগন্নাথ, বলদেব, সুভদ্রা। হাত থাকুক আর নাই থাকুক দেবতার হাত নিয়ে কেউ মাথা ঘামান না। দেবতার কৃপাই সব!

মানুষের হাতই তার অস্তিত্বের অনেকটা। মানুষের হাত আবার সেই দেবতাকে সৃষ্টি করেছে।  দেব কিংবা দেবীর জপের মন্ত্র রচনা করেছে। পার্চমেন্ট কাগজে মানুষ লিখেছে। এরপর শিলালিপি পর্ব আর ধাতুর ওপর জীবনের মাহাত্ম্য প্রচার করেছে। তারপর এসেছে কাগজ। মানুষ তার অবাক করা আবিষ্কার থেকে শুরু করে যা কিছু সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে, তা প্রথমে সূত্র হিসেবে পরে বিস্তৃতভাবে হাত কাজে লাগিয়ে লিপিবদ্ধ করেছে মানুষ।কেউ কেউ ভালো লেখেন। কিন্তু তাদের অনেকের হাতের লেখা খারাপ। আবার এমনও অনেক আছেন যাদের হাতের লেখা ভালো কিন্তু মনের ভাব প্রকাশ করতে পারেন না। তবে হাতের লেখা ভালো আবার লেখেন ভালো এমন গুণী মানুষ আদরণীয়।

কম্পিউটার খুবই কাজের জিনিস। কিন্তু কলমে আঁচড় কাটার মজা কম্পিউটারে নেই।হাতের লেখার যুগ ফুরিয়ে আসায় কলমের ব্যবহার কমেছে। পকেটে কলম আজকাল রাখেন কজন?এদিকে কাগজের ব্যবহার আর কলমের ব্যবহার কমতে থাকায় আমরা হারাচ্ছি পুরনো সেই দিনের অনেক কথা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *