এককালের কুমারটুলির ব্যস্ত প্রতিমা শিল্পী আজ ফুটপাথের আলু বিক্রেতা

নিউজ ডেস্ক: মাত্র দুবছর আগের কথা, দুর্গা পুজোর দুই তিন মাস বাকি থাকতে দম ফেলার ফুরসত পেতেন না কুমোরটুলির শিল্পীরা।
তবে সারাদিনের সেই কর্মব্যস্ততার আড়ালে লুকিয়ে থাকতো একটা না বলা আত্মতুষ্টি। আজ যদিও সবই অতীত।

এককালে প্রতিমা গড়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন অনেক, কিন্তু করোনা কালে ধূলিসাৎ হয়ে গেছে সেই সব খ্যাতি। আপাতত শিল্পী কার্তিক পাল লড়ছেন বেচেঁ থাকার লড়াই। সেইজন্যই হয়তো তাঁর এই আলু বিক্রেতার পরিচয়ের আড়ালে লুকিয়ে গেছে প্রতিমা শিল্পীর সত্তা ।

দিনের প্রথম ভাগ টুকু ফুটপাথে বসে আলু বেচেন শিল্পী কার্তিক পাল। দিনের দ্বিতীয় ভাগটায অবশ্য প্রতিমা গড়ার কাজেই ব্যস্ত থাকে। কেন এই করুন পরিণতি?

” যা অর্ডার পেয়েছি তা দিয়ে সারাবছর টানা অসম্ভব। পেট তো চালাতে হবে। অসুস্থ কাকা । স্ত্রীর হাই সুগার। ওষুধেই তো সব খরচ হয়ে যায়। খাবো কী?”, ভারাক্রান্ত মনে জানালেন কার্তিক পাল।

আগে যেখানে কুড়িটা দুর্গার অর্ডার মিলত, ২০২০ সালে সেটা সাত আটটায় এসে ঠেকে আর এইবার তো মাত্র ৪ টে ঠাকুরের বায়না এসেছে, বলেন কার্তিক বাবু। যে কটা অর্ডার মিলেছে, সেগুলোর ক্ষেত্রেও উদ্যোক্তরা বিশেষ করে ছোট উচ্চতার মূর্তি গড়তে বলেছেন। দুপুর বেলায় তাই শোভাবাজার রাজবাড়িতে সেই কটা প্রতিমা গড়ার কাজে হাত দেন কার্তিক বাবু।

কুমারটুলির আরেক খ্যাতনামা প্রতিমা শিল্পী মিন্টু পাল ব্যথিত তার এক সহ্যকর্মীর এই অবস্থা দেখে। তিনি বলেন, “শিল্পী হিসেবে আমারও মাথা হেঁট হয়ে গাছে যখন দেখেছি কার্তিক পাল ওইভাবে আলু বিক্রি করছে কিন্তু পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে আমাদের সবারই ভবিতব্য হয়তো এটাই।”

পুজোর আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি, কিন্তু কুমোরটুলি পাড়ায় নেই ব্যস্ততার ছোঁয়া। মায়ের কাঠামোতে এই সময় বোঝাই থাকতো পুজোর আঁতুড়ঘর, আজ সেগুলো সবই স্মৃতি।


স্মৃতিচারণ করতে করতে কার্তিক পাল বলেন , ” আমার মতো অনেকের অবস্থাই খারাপ। তারা চক্ষুলজ্জার ভয়ে চুপ করে আছে। আমি লজ্জা শরম বিসর্জন দিয়েছি।” বাস্তব বোধহয় এতটাই নিষ্ঠুর।


কথা শেষ করে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ান কার্তিক পাল, বলেন ” বেশিক্ষণ একটানা বসলে কষ্ট হয় ।” ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে তাঁর পা টা বেশ ফোলা, আসলে এক কালে মায়ের মূর্তি গড়তে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হতো তাঁকে। তবে, সেই দৈহিক পরিশ্রমের মাঝেও মন ভালো থাকত, কারণ শিল্পীর পরিচয় তো তার শিল্প গড়ার মধ্যে দিয়েi। নিষ্ঠুর এই অতিমারি আজ ছিনিয়ে নিয়েছে তাঁদের থেকে সেই অস্তিত্ব। তাই এক রাশ হতাশা নিয়ে, চোখের জল আড়ালে রেখে, রোজ এখন ঝুড়ি নিয়ে আলু বেচতে বসেন ফুটপাথে শিল্পী কার্তিক পাল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *