নদীয়ার শান্তিপুরের সুত্রাগড়ে জগধাত্রী পুজোর প্রথম সূচনা করেছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র, সেই থেকে ৩০০ বছর ধরে পীরের হাটের দেবী জগদ্ধাত্রী পূজিত হয়ে আসছেন

মূর্তি করে প্রথম জগদ্ধাত্রী পুজো হয় নদীয়ার শান্তিপুরের সুত্রাগড় পীরের হাটে। আজ মৃৎশিল্পের জন্য বিখ্যাত যে কৃষ্ণনগর সেই সময় সেখানে জগদ্ধাত্রীর মূর্তি গড়ার মত কোন মৃৎশিল্পী ছিলেন না। নদীয়ার ভাগীরথীর ওপারে গুপ্তিপাড়ায় কয়েকজন মৃৎশিল্পীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল কৃষ্ণনগর রাজবাড়ীর পুজোর জন্য দেবী মূর্তি গড়ার। তখন বাহকেরা কাঁধে করে ঠাকুর নিয়ে স্থানান্তরে যেত। দেবী মূর্তি সম্পন্ন হতে দেরি হওয়ায় যথাসম্ভব দ্রুতগতিতে হেঁটে কৃষ্ণনগরে পৌঁছে যাওয়ার চেষ্টা করলেও গঙ্গার এপারে শান্তিপুর আসতেই অষ্টমী তিথি শেষ হওয়ার সময় এগিয়ে আসে। কৃষ্ণনগর যেতে গেলে নবমী তিথিতে পুজো হবেনা বুঝতে পেরে সূত্রাগড় পীরের হাটে মাকে নামিয়ে দেন বাহকেরা। যদিও সেই সময় হাট বসতো সেখানে।

আরো পড়ুন-একের পর এক জমকালো সভা!হাড়োয়ার প্রচারে সুজিত বসু এবং ফিরহাদ হাকিম ঝড় তুললেন

ওই হাটের লোকজন এবং অন্যান্য অধিবাসীরা ভক্তিভরে নিয়ম মেনে জগদ্ধাত্রী পুজো করেন। সেই থেকে সূত্রাগড়ে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু হয়। রাজা এবং কৃষ্ণনগরের অধিবাসীরা দেবী দর্শন করবেন বলে দশমীর দিন বিসর্জন না হয়ে পীরের হাটের ঠাকুর বিসর্জন দেওয়া হয়েছিল একাদশীতে। দশমীতে কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির ঘট বিসর্জন হওয়ার পর সকলে এসেছিলেন দেবী দর্শন করতে। তাই এখনো সূত্রাগড়ের বিসর্জন হয় একাদশীতে, আর কৃষ্ণনগরে দশমীতে আগে ঘট বিসর্জন হয়ে পরে দেবী বিসর্জন হয়। তবে বর্তমান সময়ে পূজা উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন পিঠেরহাট জগদ্ধাত্রী মন্দিরের পাশেই রয়েছে একটি পীর মাজা, আজ থেকে প্রায় ৩৫০ বছর আগে ওই স্থানে বেশিরভাগ মুসলিম সম্প্রদায়ের বসবাস ছিল, কিন্তু পুজোর সূচনার পর থেকেই হিন্দু এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ একত্রিত হয়ে পুজোর সমস্ত কিছু জোগাড় করেন, তারপর থেকেই প্রত্যেক বছর দুই সম্প্রদায়ের মানুষ একসাথে জগদ্ধাত্রী পুজোর উৎসবে সামিল হতেন। এখন বর্তমান পরিস্থিতিতে পীর বাবার মাজার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করেন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরায়। পুজোর আগে পির মাজার সংস্কারের কাজ করেন তারা।

আরো পড়ুন-“চায়ে পে চর্চায়” প্রতারণার ছক, অভিনব প্রতারণা চক্রের মূল পান্ডাকে গ্রেফতার করলো, বিধাননগর পূর্ব থানার পুলিশ

চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর ধুমধাম শুরু হলেও এখনো নদীয়ার সুত্রাগড়ের জগদ্ধাত্রী পুজোর চলছে প্রস্তুতি। সেইমতো পীরেরহাটের দেবী জগদ্ধাত্রী প্রতিমা তৈরীর শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে। আগামী রবিবার নবমীর তিথি মেনে শুরু হবে দেবী আরাধনা, আর একাদশীর তিথি মেনে হবে দেবী বিসর্জন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *