রাজ্যে নেই একটাও ‘সখী সেন্টার’ অভিযোগ শ্রীরূপার, পাল্টা জবাব শশী পাঁজার

নিউজ ডেস্ক: ইংরেজবাজারের বিজেপি বিধায়ক শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী তৃনমূলের বিরুদ্ধে একটি গুরুতর অভিযোগ এনেছেন।তাঁর দাবি কেন্দ্র সরকারের তরফে নির্যাতিতা মহিলাদের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে ‘নির্ভয়া ফান্ড’-এর টাকায় রাজ্যের যে ২৩টি সখী সেন্টারের অনুমোদন মিলেছিল তার একটিও রূপায়িত হয়নি।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নারী ও শিশু কল্যাণমন্ত্রী শশী পাঁজা অবশ্য এই ক্ষেত্রে পাল্টা যুক্তি দিয়েছেন। তাঁর দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ওয়ান স্টপ সেন্টার বা ওএসসি-এর যা দায়িত্ব তা বিকল্প আঙ্গিকে পালন করে যাচ্ছেন।

দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ডের পর কার্যত তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল সারা ভারতবর্ষের।সেই পৈশাচিক ঘটনার ফলে গণক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল দিল্লি এবং কেন্দ্রীয় প্রশাসনকে।

রাজনৈতীক মহলে অনেকেই এটা মানেন যে তৎকালীন দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী শিলা দীক্ষিতের পতনের জন্য নির্ভয়া কাণ্ডই দায়ী।

এই ক্ষেত্রে জানিয়ে রাখা ভালো বিজেপির শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে মহিলা এবং শিশু শ্রমিকদের ঘিরে উন্নয়ন মূলক কাজের সাথে যুক্ত।

এই নির্ভয়া কাণ্ডের পর ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তের নির্যাতিতাদের সহায়তা করার জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বিশেষ উদ্যোগ নেন তিনি।

সেই সময় মনমোহন সিং সরকারের হাত ধরে সৃষ্টি হয় নির্ভয়া ফান্ড। এই ক্ষেত্রে বেশ বড় ভূমিকা ছিল শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরীর। সেই জন্যই ওনাকে অনেকেই নির্ভয়া দিদি বলেও সম্বোধন করেন।

এবারে জেনে নেওয়া যাক ঠিক কি লক্ষ্যে এই সখী সেন্টার বা ওয়ান স্টপ সেন্টার গড়ে তোলা হয়।

নির্যাতিত মহিলাদের জন্য এই সেন্টারে আশ্রয় এবং নিশুল্ক আইনি সহায়তার মতো ব্যাপারগুলো সুনিশ্চিত করা হয়। এর পাশাপাশি তাঁরা যাতে নির্যাতনের বিভীষিকা কাটিয়ে উঠে আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে পারেন তার জন্য কাউন্সেলিং করা হয়।

কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরের তত্ত্বাবধানে, কেন্দ্রের নির্ভয়া ফান্ডের টাকা থেকে এই গোটা বিষয়টিই রূপায়িত হয়।

তবে, এই প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি গতকাল একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে এনেছেন। সমীক্ষা অনুযায়ী জানা গেছে যে বাংলা বাদে পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রায় সমস্ত রাজ্যগুলিতে যত সংখ্যক ওয়ান স্টপ সেন্টারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল তার প্রায় ১০০ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ বাদে।

এই মুহূর্তে ভারতে প্রায় ৭০৪টি ওএসসি তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্র। তবে হতাশাজনক ভাবে পশ্চিমবঙ্গে একটিও সেন্টার এখনও পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি।

তবে নির্ভয়া ফান্ডের টাকা গুলি গেলো কোথায়?

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নির্ভয়া ফান্ডটি মনমোহন সরকারের সময়ে তৈরি হলেও এই ওয়ান স্টপ সেন্টার স্থাপন করা শুরু হয় মোদী সরকারের আমলেই।

বিজেপি নেত্রী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী বলেছেন, এরকম একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের উদাসীনতা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক।

শ্রীরুপা এদিন তৃনমূল সরকারকে আবেদন জানিয়েছেন যে তারা যেন অবিলম্বে রাজ্যে ২৩টি ওয়ান স্টপ সেন্টার গঠন করে পশ্চিমবঙ্গের মহিলাদের নিরাপত্তার দিকটি সুনিশ্চিত করেন।

অবশ্য রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজার বক্তব্য, এই ওয়ান স্টপ সেন্টারের পরিকাঠামো ইতিমধ্যেই গড়ে তোলা হচ্ছে রাজ্যের হাসপাতালগুলিতে।

শ্যামপুকুরের তৃণমূল বিধায়ক শশী পাঁজা জানান, ‘কেন্দ্রীয় সরকার জোর করেই অর্থ পাঠিয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেব।’

তিনি আরো বলেন, ‘ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্যে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট, মহিলা থানা তৈরি হয়েছে। এমনিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলেন, মহিলাদের উপর অপরাধের ঘটনা ঘটলে দ্রুত যেন তার বিচার হয়। সেই উদ্দেশেই মহিলা থানা ও ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের ব্যাপারে পরিকল্পনা করেছিল রাজ্য সরকার।’

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনেই প্রত্যেকটি হাসপাতালকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে তার অ্যাসিড হামলা বা যৌন হেনস্থার শিকার হওয়া কোনও নারীকে ফেরাতে পারবে না। বরং বিনামূল্যে চিকিৎসা করতে হবে সেই নির্যাতিতাদের।

আক্রান্ত মহিলাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করেছে তৃণমূল সরকার, জানান পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নারী ও শিশু কল্যাণমন্ত্রী।
শশী পাঁজা কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে রাজ্যের এই প্রকল্পের নাম বদল করে সেটিকে কেন্দ্রের প্রকল্প বলে চালানোর অভিযোগও তোলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *